ইসলামে আপন বোনের মেয়ের মেয়েকে বিবাহ করা জায়েজ নাকি ?

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, আপন বোনের মেয়ের মেয়েকে (অর্থাৎ আপন ভাগ্নীর মেয়েকে) বিবাহ করা জায়েজ নয়। এটি হারাম এবং নিষিদ্ধ। ইসলামে কিছু নির্দিষ্ট আত্মীয় রয়েছে যাদের সাথে বিবাহ করা সম্পূর্ণ নিষেধ, যাদেরকে “মাহরাম” বলা হয়। মাহরামের মধ্যে আপন বোন, ভাই, চাচী, ফুফু, মামী, খালা এবং তাদের সন্তান-সন্ততিরা অন্তর্ভুক্ত।

আপন বোনের মেয়ে এবং তার মেয়ে উভয়ই মাহরামের অন্তর্ভুক্ত, তাই তাদের সাথে বিবাহ করা ইসলামে বৈধ নয়। এই নিষেধাজ্ঞা কুরআন এবং হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

এই বিষয়ে কুরআনের সূরা নিসায় বলা হয়েছে:

“তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে, কিন্তু যদি তাদের সাথে তোমরা সহবাস না করে থাক, তবে (তাদের বদলে তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে করলে) তোমাদের প্রতি গুনাহ নেই এবং (তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং এক সঙ্গে দু’ বোনকে (বিবাহ বন্ধনে) রাখা, পূর্বে যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়ালু ” (সূরা নিসা, ৪:২৩)

যে মহিলাদের সাথে বিবাহ হারাম এখানে তার বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে সাত প্রকার নারী বংশীয় সম্পর্কের কারণে হারাম। আর সাত প্রকার নারী দুধ সম্পর্কের কারণে হারাম এবং চার প্রকার নারী বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হারাম। এ ছাড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, ফুফু-ভাইঝি অথবা খালা-বুনঝি উভয়কে একত্রে বিবাহ করা হারাম। বংশীয় সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হলঃ মায়েরা, মেয়েরা, বোনেরা, ফুফুরা, খালারা এবং ভাইঝি ও ভাগ্নীরা। আর দুধ সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হল, দুধমায়েরা, দুধ মেয়েরা, দুধ বোনেরা, দুধ ফুফুরা, দুধ খালারা এবং দুধ ভাইঝি ও ভাগ্নীরা। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হল, শাশুড়ী, সৎ মেয়ে (যে স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছে তার প্রথম স্বামীর মেয়েরা) এবং পুত্রবধু ও দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা। এ ছাড়া পিতার স্ত্রীও হারাম (যার কথা পূর্বে এসেছে)। আর হাদীস অনুযায়ী স্ত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার (স্ত্রীর) ফুফু, খালা এবং তার ভাইঝি ও ভাগ্নীর সাথে বিবাহ হারাম।মায়েরা বলতে মায়ের মা (নানী), মায়ের দাদী এবং বাপের মা (দাদী) ও দাদীর মা ও তার দাদী এইভাবে পর্যায়ক্রমে যত আসবে সকলেই মায়ের আওতায় পড়বে। আর মেয়ের আওতায় পড়বে, নাতনীরা, পুতনীরা এবং পুতনী ও নাতনীদের মেয়েরা

রেফারেন্স

এই আয়াতে ভাইঝি এবং ভাগ্নিকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা আপন বোনের মেয়ে এবং তার মেয়েকেও অন্তর্ভুক্ত করে।

সুতরাং, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, আপন বোনের মেয়ের মেয়েকে বিবাহ করা জায়েজ নয় এবং এটি হারাম।

 ইসলামে আপন বোনের মেয়ের মেয়ে (অর্থাৎ ভাগ্নীর মেয়ে) বা অনুরূপ নিকটাত্মীয়দের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি হাদীস দ্বারা সমর্থিত। এই নিষেধাজ্ঞা কুরআনের পাশাপাশি হাদীসেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে কিছু হাদীসের রেফেরেন্স দেওয়া হলো:

১. সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীস:

হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“যে নারীদের সাথে বিবাহ হারাম, তাদের মধ্যে রয়েছে: মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি (ভাইয়ের মেয়ে), ভাগ্নি (বোনের মেয়ে)…”
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১০২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ۱۴۰۷)

এই হাদীসে “ভাইঝি” (ভাইয়ের মেয়ে) এবং “ভাগ্নি” (বোনের মেয়ে) উভয়কেই হারাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং, আপন বোনের মেয়ে এবং তার মেয়ে উভয়ই এই হারামের অন্তর্ভুক্ত।


২. সহীহ মুসলিমের হাদীস:

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি এবং ভাগ্নি…”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ۱۴۰۷)

এই হাদীসেও “ভাগ্নি” (বোনের মেয়ে) এবং “ভাইঝি” (ভাইয়ের মেয়ে) উভয়কেই হারাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।


৩. সুনান আত-তিরমিযীর হাদীস:

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“তোমাদের জন্য তোমাদের মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি এবং ভাগ্নি হারাম করা হয়েছে।”
(সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ১১২৮)

এই হাদীসেও একই বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।


সারমর্ম:

উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট যে, আপন বোনের মেয়ে এবং তার মেয়ে উভয়ই ইসলামে বিবাহের জন্য হারাম। এই নিষেধাজ্ঞা কুরআন এবং হাদীস উভয় দ্বারা সমর্থিত। সুতরাং, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, আপন বোনের মেয়ের মেয়েকে বিবাহ করা জায়েজ নয় এবং এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *